আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম ‘উইন্ডোজ এক্সপি’র সব হালনাগাদ সেবা ৮ এপ্রিল শেষ হয়ে গেল। মাইক্রোসফটের এই পদক্ষেপে উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহারকারীরা কম্পিউটার নিয়ে ঝুঁকিতে পড়ে গেলেন।
বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ কম্পিউটারে এখনও এক যুগ আগের এক্সপি অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
এক্সপির হালনাগাদ সেবা বন্ধের কারণে ব্যবহারকারীরা কেমন ঝুঁকিতে পড়লেন? এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান নিওপসিসের পরামর্শক প্যাট্রিক থমাস জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বলয়হীন এক্সপি এখন সাইবার দুর্বৃত্তদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
২০০১ সাল থেকে মাইক্রোসফট মাত্র কয়েকটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম উন্মুক্ত করেছে। কিন্তু এক্সপির জনপ্রিয়তা ও স্থায়িত্ব এক যুগেরও বেশি সময় ধরে টিকে ছিল।
বিশ্লেষকেরা বলেন, কোনো কম্পিউটার যদি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে টিকে থাকে তবে ধরে নিতে হবে তাতে অবশ্যই এক্সপি রয়েছে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা জানান, এক্সপি অপারেটিং সিস্টেম চালিয়ে যেতে আপাতত কোনো সমস্যা নেই। তবে মাইক্রোসফট দাবি করছে, তাদের কাছ থেকে এক্সপি ব্যবহারকারীরা আর কোনো নিরাপত্তা আপডেট, বা সমস্যার সমাধান বা কারিগরি কনটেন্টের কোনো আপডেট আশা করতে পারবেন না।
নতুন সংস্করণের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমগুলোর ব্যবহার বাড়াতেই এক্সপিকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাইক্রোসফট। মাইক্রোসফট অবশ্য তাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু এক্সপি ব্যবহারকারীদের আশাহত করেনি।
মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই পর্যন্ত উইন্ডোজ এক্সপির জন্য অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার আপডেট দিয়ে যাবে তারা। তবে এই আপডেট দীর্ঘদিনের পুরনো এই অপারেটিং সিস্টেমে মাইক্রোসফটের অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার আপডেট কতোটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা জানান, মাইক্রোসফটের এক্সপির সেবা বন্ধ করার পদক্ষেপ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্যও বিশাল ঝুঁকি রেখে গেল। ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে, পাওয়ার প্ল্যান্টে, ছোট ছোট ব্যবসা উদ্যোগে এমনকি চিকিৎসকরাও এক্সপি ব্যবহার করছেন।
এক্সপি নির্ভরযোগ্য অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজ ভিস্তা, উইন্ডোজ-৭ কিংবা উইন্ডোজ-৮-এ আপগ্রেড করার পরিবর্তে অনেকেই থেকে গেছেন এক্সপিতেই।
কম্পিউটার নিরাপত্তা পণ্য নির্মাতা ম্যালওয়্যারবাইটের প্রধান নির্বাহী মার্চিন ক্লেজনিস্কি জানান, বাগ ঠিক করার জন্য মাইক্রোসফটের প্যাচ ছাড়া এক্সপি চালিত পিসিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে এবং ঘন ঘন ক্রাশ করবে। এ ছাড়াও নিরাপত্তা আপডেটের অভাবে হ্যাকারদের জন্য এক্সপি আক্রমণ সহজ হয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা অবশ্য জানিয়েছেন, যে হারে ম্যালওয়্যার আক্রমণের পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে সেভাবে আক্রমণ না ঘটতেও পারে। ঠিক ৮ এপ্রিলের পরই আক্রমণ শুরু হবে এটা ভাবা ঠিক নয়Ñ ধীরে ধীরে উইন্ডোজ এক্সপিতে আক্রমণ বাড়তে পারে।
ঝুঁকি থেকে রক্ষার উপায়
এক্সপিতে ম্যালওয়্যার ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা পেতে উইন্ডোজের নতুন সংস্করণ ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়ে আসছে মাইক্রোসফট। মূলত নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এবং সাইবার হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে এক্সপি হালনাগাদ করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু নিরাপত্তার বেশ কিছু দিক উন্মুক্ত হয়ে যাবে এবং মাইক্রোসফটও কোনো হালনাগাদ দেবে না, তাই এক্সপি থেকে উইন্ডোজের নতুন সংস্করণে হালনাগাদ করে ফেললে নিরাপদ থাকা যাবে।
এ ছাড়া উইন্ডোজের নতুন সংস্করণগুলোতে আরও উন্নত সুবিধা, নিরাপত্তাব্যবস্থা ইত্যাদি বেশ সক্রিয় বলেও ব্যবহারকারীরা নিরাপদেই থাকবেন। যারা এক্সপি থেকে নতুন সংস্করণে হালনাগাদ করতে চান, তারা মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইটে থাকা বিশেষ টিউটোরিয়াল দেখে নিতে পারেন। বিস্তারিত জানতে : (যঃঃঢ়://রিহফড়ংি.সরপৎড়ংড়ভঃ.পড়স/বহ-ঁং/বড়ং)
যারা উইন্ডোজ হালনাগাদ করতে পারবেন না বা নতুন পিসি কিনতে পারবেন না তাদের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে থার্ড পার্টি বা তৃতীয় পক্ষের নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করে এক্সপির ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারেন। তবে উইন্ডোজ এক্সপির জন্য নিরাপত্তা সফটওয়্যার বা এর প্রয়োজনীয় উপকরণ পাওয়ার জন্য খুব কম সাইট, প্রোগ্রাম বা সেবা খুঁজে পাওয়া যাবে।
যাদের পিসিতে হার্ডওয়্যারের কারণে হালনাগাদ উইন্ডোজ সমর্থন করবে না তাঁদের ওপেন সোর্স লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা।
– See more at: http://mtnews24.com/details.php?id=12287&page=2#sthash.Qj1JIbTb.dpuf
পাঠকের মতামত